বাংলাদেশ ব্যাংক সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম
সুপ্রিয় পাঠক সকল আজ আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা করবো। আপনারা হয়তো
এতক্ষণে পোস্টের টাইটেল বা শিরোনাম দেখে বুঝে গেছেন। হ্যা আজ আলোচনা থাকছে
বাংলাদেশ ব্যাংক সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম সম্পর্কিত। তাই আপনার প্রতি তথ্য
সঠিকভাবে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন এবং জেনে নিন বাংলাদেশ ব্যাংক সঞ্চয়পত্রের
নতুন নিয়ম
সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর আসল টাকা তুলতে হয়রানি ও ভোগান্তি দূর করতে
নতুন নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম এই
বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকেই সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পূর্তির দিনই
মুনাফা সহ আসল টাকা গ্ৰাহকের ব্যাংক হিসেবে জমা করতে হবে।আরো বলা হয়েছে, জাতীয়
অনলাইন ম্যানেজমেন্টের সিস্টেম মাধ্যমে বিক্রি করা সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বা সুদ
সময়মতো গ্ৰাহকদের ইন্টিমেশন প্রদান চেকের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
পোস্টের সূচিপত্রঃ বাংলাদেশ ব্যাংক সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম
বাংলাদেশ ব্যাংক সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম
নতুন বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম বা সঞ্চয়পত্র
বিনিয়োগে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন আয়কর আইন খসড়া অনুসারে সঞ্চয়পত্রে
পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে কোনো কর দিতে হবে না। মুলত ক্ষুদ্র
বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলাদেশ সরকার। আপনি যখন
সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তুলতে যাবেন, তখন আপনার মুনাফা থেকে উৎসে কর কেটে রাখা হবে
না।
আইনটি সংসদে পাস হলে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ছোট সঞ্চয়কারীরা মুনাফার
পুরো টাকাই হাতে পায়ে জাবেন। সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়মে বিনিয়োগ বলতে মুনাফার
হার কমে গেছে। টিআইন সার্টিফিকেট দুই লক্ষ টাকা বিনিয়োগের উর্ধ্বের ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য করা হয়েছে। কোন আদেশ জারি না হলেও ব্যাংকগুলো পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত
টিন ছাড়াই বিনিয়োগ সুযোগ দিচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ ডেবিট ও ক্রেডিট বলতে কি বুঝায়
আপনি যদি বড় বিনিয়োগকারী হন পুরো অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করায় ভালো।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্র কোন দেশের ব্যাংক হতে কিনতে পারবেন না। তাছাড়া আপনি যদি কোন
ডাকঘর থেকে সঞ্চয়পত্র কিনতে চান তাহলে আপনাকে অনেক টাকা জরিমানা দিয়ে কিনতে
হবে। মুনাফার হার যেহেতু নিম্নগামী সেহেতু ৩০ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগ না করাই
ভালো।
পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম
বছর মেয়াদি এই সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১.৫২%। এখন এই
সঞ্চয়পত্রের ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার কমিয়ে করা হয়েছে ১০%। আর
৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই হার সাড়ে ৯ শতাংশ। ছোট
বিনিয়োগকারীদের অর্থাৎ ১৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার নিয়ে
চিন্তিত হয়ে পড়ার কোন কারণ নেই।
তবে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের জন্য ফরম ডাকঘর ছাড়াও সঞ্চয়পত্র
সকল ব্যাংক ক্রয় করা যায়। তবে সকল ব্যাংকের সকল বাঞ্চে এটি চালু করা নেই।
সঞ্চয়পত্র ক্রয় এখন কোন ব্যাপার না, ফরম পূরণ করে ছবি, আইডি এবং টিআইএন
সার্টিফিকেট নিয়ে ব্যাংক চলে যান অতি দ্রুতই সঞ্চয়পত্র কেনা হয়ে যাবে।
সঞ্চয়পত্র নগদায়ন নিয়মসঞ্চয়পত্র চেক করার নিয়ম
বিনিয়োগের সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো সঞ্চয়পত্র। ব্যাংকে স্থায়ী আমানত এবং
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের তুলনায় ও নিশ্চিত ও সর্বোচ্চ মুনাফার দিক থেকেও
সঞ্চয়পত্র সবচেয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। আবার মেয়াদ পূর্তির আগে আপনার যখন দরকার
তখন সঞ্চয়পত্র ভেঙ্গে আসল টাকা বের করে নিয়ে আসতে পারবেন এতে কোন সমস্যায়
পড়তে হবে না আপনাকে।
আরো পড়ুনঃজাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন জানুন
এক্ষেত্রে আপনি যত বছর পর সঞ্চয়পত্র ভেঙ্গে ফেলতে চান তত বছরের জন্য নির্ধারিত
হারে মুনাফা দেওয়া হবে। তবে এর আগে অতিরিক্ত হারে যে মুনাফা পেয়েছেন তা আসল
টাকা থেকে কেটে নেওয়া হবে। মেয়াদ পূর্তির পর সঞ্চয়পত্রের টাকা বের করতে চাইলে
তেমন কিছু করতে হবে না। কিন্তু মেয়াদ পূর্তির আগে সঞ্চয়পত্রের টাকা বের করতে
চাইলে কী করতে হবে তা জেনে নিন
- মেয়াদ পূর্তির পূর্বে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর জন্য যে ব্যাংক, ডাকঘর বা সঞ্চয় অধিদপ্তর অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন সেখানে সাদা কাগজে বা প্রিন্ট করা লিখিত আবেদন করতে হবে।
- আবেদনের সঙ্গে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, সঞ্চয়পত্রের রেজিস্ট্রেশন কপি ও সঞ্চয়পত্র কেনার অনলাইন প্রিন্ট কপি জমা দিন।
- যে ব্যাংক থেকে আপনি সঞ্চয়পত্র কিনেছেন তারা সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর ব্যবস্থা করে কয়েকদিনের মধ্যেই টাকা জমা হয়ে যাবে আপনার অ্যাকাউন্টে।
- ডাকঘর থেকে সঞ্চয়পত্র কিনলে, সঞ্চয়পত্র নিবন্ধন কপি এবং চেক নিয়ে সহকারী পোস্ট মাস্টারের কাছে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর আবেদন করতে হবে।
- মেয়াদ উত্তীর্ণের ক্ষেত্রে আবেদন করতে হবে।
- অনুমোদন স্বাক্ষর নিয়ে ক্যাশ অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে।
সঞ্চয়পত্র চেক করার নিয়ম
আপনি অনলাইনে বা ফোনের মাধ্যমে যে বিনিয়োগ গুলো পরিচালনা করছেন তার জন্য কেবল লগ
ইন করুন এবং মূল্যায়নের জন্য কল করুন। এছাড়াও আপনি আপনার হোমপেজে আপনার
বিনিয়োগের মূল্য দেখতে পারেন। আপনারা যদি একটি বিনিয়োগ গ্যারান্টি যুক্ত গ্ৰোথ
বন্ড থেকে তবে আপনি শুধুমাত্র অনলাইনে একটি মূল্যায়ন পেতে পারেন।
আপনার সঞ্চয়পত্র অনলাইনের মাধ্যমে ভালো ভাবে চেক করতে পারেন। যদি সঞ্চয়পত্রটি
চেক করে নেন তাহলে পরবর্তীতে আপনাকে আর কোন সমস্যায় পড়তে হবে না। তাই কোন কিছু
করার আগে সঞ্চয়পত্রটি ভালো ভাবে চেক করে নিবেন। আপনি আপনার বিভিন্ন অনলাইন
ভিত্তিক অ্যাপস এর মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র চেক করে নিবেন।
সর্বনিম্ন কত টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যায়
অনেকেই আছেন যারা ভাবেন যে ১লক্ষ টাকার নিচে হয়তো সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যায় না।
আজ আমি আপনাদের জানাবো, ১০ টাকায়ও সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। কয়েকটি সঞ্চয়পত্র
নিয়ে আলোচনা করবো-
পরিবার সঞ্চয়পত্র
এটি মহিলা, প্রতিবন্ধী ও বয়সীদের আর্থিক নিরাপত্তা দিতে ২০০৯ সালে চালু করা
হয়।মাছ ১০০০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মূল্য মানেই সঞ্চয়পত্র দেশের
নাগরিকদের জন্য চালু করা হয়েছে। দেশের জেলা সঞ্চয়পত্র ব্যুরো, জাতীয় সঞ্চয়
ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক শাখা সমূহ এবং ডাকঘর থেকে ক্রয় ও ভাঙানো বা নগদায়ন করা
যায়। তবে আপনার প্রয়োজন যে কোন সময় ভাঙ্গাতে বা নগদায়ন করতে পারবেন।
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
জি এটি পুরুষদের জন্য চালু করা হয়েছে। পরিবার সঞ্চয়পত্র ধারী ৪৫ লক্ষ টাকার
অধিক সঞ্চয়পত্র কিনতে চাইলে একজন মহিলাও ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
ক্রয় করতে পারবেন। পরিবার সঞ্চয়পত্র মাসিক মুনাফা দিলেও ৩ মাস অন্তর
মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র নাম শুনেই বোঝা যায় যে, এটি ৩ মাস পর পর মুনাফা প্রদান
করে থাকে। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক ২০০৪ সালে চালু হয়। তবে একক বিনিয়োগ
সীমা ৩০ লক্ষ টাকা। তিন বছর মেয়াদে এটি ক্রয় করা হয় তবে চাইলে যে কোন সময়
ভাঙানো যায়।
৫-বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
এটি বর্তমানে ব্যাংকগুলো বিক্রি করা হয় না। জেলা সঞ্চয় ব্যুরো বা জাতীয় সঞ্চয়
ব্যুরো অফিস হতে বর্তমানে এটি ক্রয় করা যায়। বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র পাঁচ বছর
মেয়াদে হয়ে থাকে এবং এটি ১৯৭৭ সালে চালু হয়। এছাড়াও ৫০ টাকা;১০০ টাকা; ৫০০
টাকা ইত্যাদি মূল্যমানের পাওয়া যায়।৩০ লক্ষ টাকা এবং ৬০ লক্ষ টাকার বাংলাদেশ
সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যায়।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র
সরকারি চাকরিজীবীদের অবসর গ্রহণের পর অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের উদোম মাধ্যম হচ্ছে
পেনশনার সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগ। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে সর্বোচ্চ ১১.৭৬%
পর্যন্ত মুনাফা পাওয়া যায়। এটি ২০০৪ সালে পেনশনার বা অবসর প্রাপ্তদের জন্য চালু
করা হয়। পেনশনারগন এটি সর্বোনিম্ন ৫০,০০০ টাকা মূল্যে এটি ক্রয় করতে পারবেন।৫০
লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায় তবে আনুতোষিক লাম্পগ্ৰান্ট , জিপিএফ
সম্মিলিত অর্থের অতিরিক্ত নয়। পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে জাতীয় সঞ্চয়
ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক শাখা সমূহ, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ ডাকঘরে যেতে পারে।এটি
সাধারণত ৫ (পাঁচ) বছর মেয়াদী হয়ে থাকে।
লেখকের শেষ মন্তব্য
যে অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র কেনা হয় , সেই বছরেই নির্দিষ্ট হারে আয়করের ক্ষেত্রে
বিনিয়োগ পাওয়া যায়। তবে সঞ্চয়পত্র কেনার সংশ্লিষ্ট বছরেই কেবল আয়কর রোয়াত
পাওয়া যায়। একই সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে পরবর্তী কোনো বছর এই রোয়াত সুবিধা পাওয়া
যাবে না। তাই আমাদের সঞ্চয়পত্র ভালো করে দেখে বা অনলাইনে চেক করে নিতে হবে।
তাহলে পরবর্তীতে কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না। আমাদের সঞ্চয়পত্র সম্পর্কে ভালো
ধারণা থাকতে হবে তাহলে সঞ্চয়পত্রটি আসল না নকল সেটা আমরা চিহ্নিত করতে পারব।
সবার মাঝে এই সঞ্চয়পত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।এই ডিজিটাল বাংলাদেশ সামনে
আরও উন্নত মানের করে তুলবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url