মাথা ব্যাথার কারণ কি - মাথা ব্যাথার প্রতিকার জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম পাঠকবিন্দ আজকে আপনাদের সাথে মাথা ব্যাথা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা শেয়ার করবো। মাথা ব্যাথা এখন মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যার কারণ দাড়িয়েছে। মাথা ব্যাথার অনেক রকম কারণ ও রয়েছে। আজকে আমরা সম্পূর্ণ ভাবে মাথা ব্যাথার কারণ কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা জানবো।
মাথা ব্যাথার কারণ কি
অতিরিক্ত শারীরিক, মানসিক পরিশ্রম, ক্ষুধার্ত থাকলে,অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান, চা-কফি পান, অনিয়মিত এবং অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন, রোদ বা অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া, যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ ইত্যাদি। আজকের পোস্টে আমরা জানবো মাথা ব্যাথার কারণ কি, মাথা ব্যাথার লক্ষ্মণ, মাথা ব্যাথার প্রকারভেদ,মাথা ব্যাথার প্রতিকার ইত্যাদি।

পোস্টের সূচিপত্রঃ মাথা ব্যাথার কারণ কি

মাথা ব্যাথার কারণ কি

মাথা ব্যাথার অনেক রকমের কারণে হয়ে থাকে। মাথা ব্যাথার কারণে একজন মানুষের কর্মক্ষমতা ও সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্নায়ুরোগের মধ্যেও মাথা ব্যথার হার সবচেয়ে বেশি। বারবার মাথা ব্যথার সব রোগীর মধ্যে এগারো শতাংশ মাইগ্রেন বা আধকপালি মাথা ব্যথা, ৭০ শতাংশ টেনশন টাইপ হেডেক বা মাংসপেশির সংকোচনজনিত মাথা ব্যথা এবং ৩ শতাংশ ক্রনিক ডেইলি হেডেক বা দীর্ঘস্থায়ী মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হয়। সাধারণত বয়স্ক মহিলারাই বিভিন্ন ধরনের মাথা ব্যথায় কষ্ট পায়।
সাধারণত মাথা ব্যাথার কারণ কি বা মাথা ব্যথা দুই ধরনের হয়ে থাকে।

১. প্রাইমারি টাইপ হেডেক মাথা ব্যাথা

  • টেনশন টাইপ হেডেক
  • ক্লাস্টার হেডেক
  • জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
  • ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ
  • মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন
  • পেশাগত থেরাপি

২. মাধ্যমিক টাইপের মাথা ব্যাথা।

  • সাইনাস সংক্রমণ
  • হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ
  • চোখের সমস্যা (Eye Strain)
  • মস্তিষ্কের আঘাত বা ট্রমা (Head Injury)
  • মেনিনজাইটিস (Meningitis)

মাইগ্রেন কি

জীবনেও মাথাব্যথা হয়নি এই রকম লোক খুব কম হয়তো এমন খুঁজেও পাওয়া যাবে না। মাঝে মধ্যে মাথার পিছনের দিকে অথবা বাম সাইটে ব্যাথা হতে পারে। মাথার ব্যাথা একটি কঠিন সমস্যা যার সবচেয়ে বড় একটা কারণ হলো মাইগ্রেনের সমস্যা । যেটি কোনো সাধারণ মাথা ব্যাথা নয়। মাথাব্যথা মস্তিষ্ক, রক্তনালী এবং পার্শ্ববর্তী স্নায়ুর মধ্যে প্রেরিত সংকেতগুলির মিথস্ক্রিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। একটি অজ্ঞাত পদ্ধতি নির্দিষ্ট স্নায়ুকে সক্রিয় করে যা মাথাব্যথার সময় পেশী এবং যা প্রভাবিত করে রক্তনালী গুলোকে। 
গবেষণা করে গবেষকেরা যেটা পেয়েছেন তার থেকে তারা বিশ্বাস করে যে মাইগ্রেনের ব্যাথা অস্থি স্নায়ু কোষ গুলোর কারণে হয়ে থাকে। যেটি একাধিক ট্রিগারের মতো উড়ে যায় হ্যান্ডেল থেকে। স্নায়ু কোষ গুলোর রক্তনালী তে প্রেরণ করা হয় বৈদ্যুতিক আবেগ। যা মস্তিষ্কের মধ্যে গিয়ে রাসায়নিক ভাবে পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে। তাই ফল স্বরূপ ভাবে বলা যায় ব্যথা অক্ষম।

মাথা ভারী লাগান কারন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন ব্রেন স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষ্মণ হলো মাথা সব সময় ভারী থাকা। তাই এসব বিষয়ে সবাইকে সময় সচেতন থাকতে হবে।হঠাৎ দেখা যায় হাত, মুখ ও পা এর মতোন শরীর এর একটা অংশ দুর্বল, অসাড় বা পক্ষ ঘাত এর মতোন সমস্যা দেখা যায় তাহলে এর মানে বুঝতে হবে ব্রেন স্ট্রোক করেছে । তাই দেরি না করে হাসপাতাল এ গিয়ে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া লাগবে। 

ব্রেন স্ট্রোকের আগে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসবে। আপনি হঠাৎ ঝাপসা দেখবেন। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ব্রেন স্ট্রোকের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীর সময়মতো চিকিৎসা পেলে বাঁচানো যায়। তবে ব্রেন স্ট্রোক শুরু হওয়ার পর প্রথম ৪-৫ ঘন্টার মধ্যে যদি চিকিৎসা দেয়া হয় তবে অনেকাংশে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
বছরে দু-একবার মাথা ব্যথা বা ভারী হলে তেমন কোনো সমস্যা নাই। তবে মাথা ব্যাথা মাঝেমধ্যে হলে কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই তবে নিয়মিত মাথা ব্যথা হইলে অবশ্যই অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ হলো এরপিছনে গুরুতর কোনো আশঙ্কা থাকলে ও থাক তে পারে।

মাথা ব্যাথার প্রকারভেদ

মাথা ব্যাথা বিভিন্ন ধরণের রয়েছে প্রায় ১৫০টিরও বেশি। এগুলি দুটি শ্রেণীতে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় যেমন: 
  • ১. প্রাথমিক এবং
  • ২. মাধ্যমিক মাথাব্যথা।

প্রাথমিক মাথা ব্যাথাগুলো হলো:

  • মাইগ্রেন।
  • ক্লাস্টারে মাথাব্যথা।
  • নতুন দৈনিক পুনরাবৃত্ত মাথাব্যথা।
  • মাথাব্যথা যা উত্তেজনার কারণে হয়।

মাধ্যমিক মাথা ব্যাথাগুলো হলো:

  • একটি ভিন্ন চিকিৎসা অবস্থার কারণে হয়।
  • মস্তিষ্কের রক্তনালীর রোগ।
  • মাথায় আঘাত।
  • উচ্চ রক্তচাপ।
  • সংক্রমণ।
  • ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার।
  • সাইনাস কনজিস্টেশন।
  • ট্রমা।
  • টিউমার।
উপরোক্ত লেখায় আমরা মাথা ব্যাথা এর অনেক গুলো প্রকার ভেদ দেখলাম। মাথা অতিরিক্ত ব্যাথা করলে মাই গ্রেন, ব্রেন স্টক সহ অনেক বড় কিছু হতে পারে। তাই আমরা সকলে সুস্থ থাকার চেষ্টা করব।

মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষ্মণ

মাথা ব্যথার নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। এটি এমন এক ধরনের ব্যথা বা ব্যথার অনুভূতি, যা মাথা ও মাথার চারপাশে হতে পারে। তবে এটা যেহেতু সব মানুষেরই হয় সেহেতু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি গুরুতর কোনো রোগ নয়। তবে কিছু মাথা ব্যথা আছে সেগুলোকে কিছু গুরুতর রোগের উপসর্গ বা নির্দেশক বলা হয়ে থাকে।মাইগ্রেনের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে মাথার যেকোনো একপাশে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের ব্যথা। অনেক সময় তীব্র ব্যাথা অনেক বেশি হলে বমি বমি ভাবও হতে পারে। অনেকের আবার এসব লক্ষণ ছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ থাকে। 

যেমন- ঘাম, মনোযোগহীনতা, অনেক বেশি গরম বা অনেক বেশি ঠান্ডা অনুভব হওয়া, পেট ব্যাথা বা ডায়রিয়া। এসব লক্ষণ যদি কারো মধ্যে দেখা যায় তাহলে দ্রুত চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ ভাবে মাইগ্রেন এর মাথা ব্যাথা পরিবারের মধ্যেও চল তে থাকে। পরবিারের মধ্যে পিতা মাতা কারো একজনের মাইগ্রেন হলে বড় হতে থাকা শিশুদের মধ্যেও মাইগ্রেন এর প্রকোপ দেখতে পাওয়া যায়।
আসলে, যেসব শিশুর বাবা-মা মাইগ্রেনে ভোগেন তাদেরও তাদের বিকাশের সম্ভাবনা চারগুণ বেশি। অনেক সময় মাথাব্যথা পরিবেশগত কারণগুলির কারণেও হতে পারে যেমন: সিগারেটের ধোঁয়া, এলার্জি, পারফিউমের গন্ধ বা পচা দূর্গন্ধ। এগুলো সরাসরি আমাদের মাথাব্যথা মস্তিষ্ক, রক্তনালী এবং পার্শ্ববর্তী স্নায়ুর মধ্যে প্রেরিত সংকেতগুলির মিথস্ক্রিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। একটি অজ্ঞাত পদ্ধতি নির্দিষ্ট স্নায়ুকে সক্রিয় করে যেটা মাথাব্যথার সময়ে পেশী এবং রক্তনালী গুলো প্রভাবিত।

মাথা ব্যাথার প্রতিকার

একটা পরিষ্কার গরম কাপড় কিছু সময় পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেটা কপাল এ দিয়ে রাখা ভালো । গোসল করার জন্য হালকা কুসুম গরম পানি নেওয়া ভালো। বিশেষ ভাবপ টেনশন এর কারণ এ যদি মাথায় ব্যথা হয় তাহলে এটায় ভাল কাজ দেয়। এ জন্য মাথায় ব্যথা করার সময় আদা চাবালে অথবা আদা দিয়ে চা খেলে মাথা ব্যাথা কমে যায় । এমনকি অন্যান্য ব্যথাও কমে যায়। মাথাব্যথা থেকে তাৎক্ষণিক পরিত্রাণ পেতে বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধ, যেমন প্যারাসিটামল ইত্যাদি সেবন করা যেতে পারে। ব্যথানাশক ওষুধের সঙ্গে অবশ্যই পেপটিক আলসাররোধী ওষুধ খেতে হবে। 

অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ সেবনেও মাথাব্যথা হতে পারে। এ সমস্যাকে বলে মেডিসিন ওভার ইউজ হেডেক। তাই খুব প্রয়োজন না হলে ঘন ঘন ব্যথানাশক ওষুধ না খাওয়াই ভালো। চিকিৎসকের পরামর্শে দীর্ঘমেয়াদি কিছু ওষুধ সেবনে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। মাথা ব্যাথার প্রতিকার হিসেবে আরও একটি কাজ করা যেতে পারে।মাথা ব্যাথার যে বিশেষ কারণগুলো আছে সেগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।

যেমন: মাথা ব্যাথার অনেক রকম কারণ থাকতে পারে যেমন অতিরিক্ত শারীরিক, মানসিক পরিশ্রম, ক্ষুধার্ত থাকলে,অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান, চা-কফি পান, অনিয়মিত এবং অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন, রোদ বা অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া, যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ ইত্যাদি। এসব থেকে যথা সম্ভব দূরে থাকার অভ্যাস করতে হবে। তাহলে ওষুধ ছাড়াও মাথা ব্যাথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।

লেখকের শেষ মন্তব্য

আমরা ইতিমধ্যে উপরিউক্ত অনুচ্ছেদ গুলোর মাধ্যমে মাথা ব্যাথা সম্পর্কিত সকল তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি তথ্য গুলো আপনার জন্য অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যাইহোক মাথায় অতিরিক্ত চাপ বা প্রেসার পড়লে মাইগ্রেনের সমস্যা হয়ে থাকে। এসব থেকে মুক্ত হতে উপরোক্ত নিয়মকানুন মেনে চলা উচিত। তাই আমরা সকলে চেষ্টা করবো সঠিকভাবে সঠিক নিয়ম মেনে চলার। পরিশেষে দৈনন্দিন জীবনের সকল ধরনের আপডেট জানতে নিয়মিত এই সাইটে ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url