বাংলাদেশের মাদক আসক্তির কারণ ও প্রতিকার
আসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক আজকের এই প্রতিবেদনে আপনাকে স্বাগতম। আাশা করি
উপরের টাইটেলটি দেখেই বুঝতে পারছেন আজকের আলোচনার বিষয় বস্তু কি?। আজকের আলোচনায়
থাকছে বাংলাদেশের মাদক আসক্তির কারণ ও প্রতিকার এবং এই বিষয়ে সকল তথ্য পেতে চাইলে সম্পূর্ণ
প্রতিবেদনটি পড়ুন।
সারা বিশ্বে তরুণ প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর বিষয় গুলোর মধ্যো অন্যতম সমস্যা
মাদকাসক্তি। এটি আমাদের সমাজিক ও নৈতিক জীবনে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। বাংলাদেশের মাদক আসক্তির কারণ ও প্রতিকার একজন মাদক
গ্রহণকারী মাদক গ্রহণের ফলে নিজের ক্ষতি তো করেই পাশাপাশি এলাকায় নানা রকম
বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। বর্তমান বাংলাদেশের মাদক আসক্তির কারণ ও প্রতিকার। অনেকেই অনেক
রকম সমস্যার কারণে মাদকের আসক্ত হয়ে পড়ে। আমরা অনেকেই অনেক রকম মাদকের নাম শুনে
থাকি যেমন : হিরোইন, কোকেন, ইয়াবা, গাঁজা ইত্যাদি এর মধ্যে সবথেকে বেশি ব্যবহৃত
হচ্ছে ইয়াবা ও গাঁজা।
পোস্টের সূচিপত্রঃবাংলাদেশের মাদক আসক্তির কারণ ও প্রতিকার
বাংলাদেশে মাদক আসক্তির কারণ ও প্রতিকার
আমরা উপরের শিরোনাম দেখে বুঝতে পারছি আজকের মূল আলোচনার বিষয় কি? তাই চলুন দেরি
না করে মূল আলোচনায় ফিরে যাই এখন আমারা জানবো বাংলাদেশের মাদক আসক্তির কারণ ও প্রতিকার।
মাদক আসক্তির কারণ: মাদকাসক্তের সবচেয়ে বড় কারণ মানসিক চাপ। মানসিক চাপের
কারণে বেশির ভাগ মাদক সেবন করতে দেখা যায়। বর্তমান বাংলাদেশে কিশোরদের মধ্যে মাদক
আসক্তি বেশি লক্ষ্য করা যায় কারণ এই সময়ে তাদের মধ্যে নানারকম হতাশা এবং
দুশ্চিন্তার সৃষ্টি হয় আর এই হতাশা এবং দুশ্চিন্তা কমাতে মাদক সেবন করে। ধীরে
ধীরে তারা মাদকে আসক্ত হয়ে যায়।
প্রতিকার: মাদক আসক্তির প্রতিকার অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল
প্রক্রিয়া। এটি সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ এবং পরিবার ও সমাজিক সমর্থনের মাধ্যমে
প্রতিকার করা যায়। নিম্নে কিছু প্রতিকার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো।
চিকিৎসা : মাদক আসক্তির চিকিৎসায় সাধারণত ডিটক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। ডিটক্স হলো মাদক থেকে শরীরকে মুক্ত করার উপায়।
সমর্থন: মাদক আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজের দৃড় ইচ্ছা শক্তি এবং
পরিবারের সদস্যদের সাপোর্ট অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয়জনদের সহায্য সহযোগিতা
মাদকআসক্তদের সুস্থ হতে সাহায্য করে।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন : এটি মানসিক স্বাস্থের উন্নতি এবং নতুন অভ্যাস তৈরিতে
সাহয্য করে যেমন: নিয়মিত ব্যায়াম, নতুন শখ গ্রহণ ইত্যাদি।
মাদক আসক্তির পারিবারিক কারণ
মাদক আসক্তের নিদিষ্ট কোনো কারণ বলা কঠিন। সে বিভিন্ন ভাবে মাদকের আসক্ত হতে
পারে। মাদকে আসক্ত পাড়াপ্রতিবেশি, মাদকে আসক্ত বন্ধুবান্ধব, কৌতুহল এবং নানারকম
হতাশা ও দুশ্চিন্তার কারণে মাদকের আসক্ত হতে পারে। এছাড়াও কিছু কারণ তুলে ধরা হলো
:
- খাবারের খোটা দেওয়া।
- পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর কোনো জব না পেলে
- পরিবার থেকে চাপ সৃষ্টি করে ফলে সে হতাশায় ভোগে।
- পারিবারিক কারণে পছন্দের মানুষকে বিবাহ করতে পারছে না।
- অন্য কোথাও বিবাহ করলে বাড়িতে বলতে পারছে না ইত্যাদি।
সুতরাং বলা যায় উক্ত কারণ গুলোর ফলে অনেকেই দুশ্চিন্তা ও হতাশায় ভুগছে যার জন্য
দায়ী এই পরিবারের সদস্য।
বাংলাদেশে মাদক আসক্তির প্রভাব
আমাদের সমাজে মাদক আসক্তি একটি বড় সমস্যা। মাদক আসক্তির ফলে সমাজ ও পারিবারিক
জীবনে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। একজন মাদক আসক্ত ব্যাক্তির মাদকের অর্থের যোগান
দিতে গিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায় এবং পরিবারের সকলের সুখ শান্তি নষ্ট
করে।সমাজে ঐ পরিবার এবং তার কোনো মূল্য দেয় না। ঘর, কর্মস্থল,শিক্ষাপ্রতিষ্টান
এছাড়াও আরও অনেক জায়গায় থেকে মাদক বিক্রি করা হচ্ছে এবং ক্রিতারা সংগ্রহ করছে।
ইসলামে মাদক গ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
মাদক মানুষের স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করে দেয় এবং নানা অপরাধমূলক কাজে উৎসাহিত করে।
সব ধরনের নেশা দ্রব্য হারাম করা হয়েছে মানুষের বুদ্ধি বিবেক সুরক্ষার জন্য।যে
ব্যক্তি মাদক গ্রহণ করবে তার জন্য পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা। তাই মাদক
গ্রহণের ফলে ইহকাল ও পরকালের শাস্তি ভোগ করতে হয়। এজন্য আমাদের উচিত মাদক গ্রহণ
না করা এবং যারা মাদকে আসক্ত তাদেরকে এই পথ থেকে বের করে নিয়ে আসা।
মাদক আসক্তির লক্ষণ
মাদকাসক্তের ফলে একজন মানুষের শারীরিক বা মানুষিক কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
পরিবর্তন গুলো ভালো করে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় সে মাদকে আসক্ত কিনা যেমন :
- তার মুখে বা শরীরে অদ্ভুত কোনো গন্ধ পেলে।
- চোখের মনি লাল হয়ে গেলে।
- হঠাৎ ঘুমের সময়ের পরিবর্তন দেখলে এবং অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে বা কমে গেলে।
- ঘরে বা বিছানায় পাউডার জাতীয় কোন জিনিস পাওয়া গেলে।
- অকারণে বিরক্ত বোধ করলে।
- কাজেও অমনোযোগী দেখা দিলে।
- এছাড়াও আরো অনেক লক্ষণ দেখে বোঝা যায় কোন ব্যক্তি মাদকে আসক্ত কিনা।
মাদক আসক্তি প্রতিরোধের উপায়
মাদকাসক্তি প্রতিরোধে সমাজ ও পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বর্তমান সময়ে
কিশোরদের মাদক এ আসক্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাই পরিবারের করনীয়
তার প্রতি সচেতন হওয়া। সে কখন কোথায় যাচ্ছে এবং কেমন বন্ধুদের সাথে মেলামেশা
করছে সেদিকে খেয়াল রাখা। মাদকে আসক্ত হওয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে গণসচেতনতা
সৃষ্টি করা এবং যারা মাদকে আসক্ত তাদেরকে খেলাধুলা সহ নানা সামাজিক কাজে নিয়োজিত
থাকতে উৎসাহিত করা। তাদেরকে বোঝাতে হবে মাদকদ্রব্য গ্রহণ বন্ধ করার জন্য নিজের
ইচ্ছা যথেষ্ট। প্রয়োজনে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে পরামর্শ দেওয়া।
মাদক আসক্তির কুফল
মাদক গ্রহণের ফলে শারিরিক ও মানসিক দুই ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে। নিম্নে কিছু
শারিরিক সমস্যা তুলে ধরা হলো ---
- ফুসফুসে পানি জমে
- মস্তিষ্কের ওজন কমে ৯০০গ্রাম হয়ে যায়
- সৃতিশক্তি কমিয়ে দেয়
- খাদ্যভ্যাস নষ্ট করে
- যৌন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়
- ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণের ফলে এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
- লিভার ও কিডনির সমস্যা হতে পারে
ইসলামে মাদক নিষিদ্ধ কেন
মাদক আসক্তি ফলে মানুষের জ্ঞান- বুদ্ধি লোপ পায় এবং এটি মানুষকে আল্লাহর ইবাদত
থেকে দূরে রাখে বলে ইসলামে মাদক নিষিদ্ধ। মাদক মানুষের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে
এবং মাদক সেবনের ফলে আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ হতে পারে না।রাসুল(স.) বলেছেন
প্রত্যোকটি নেশাজাতীয় দ্রব্য মাদক। মাদক সেবনের ফলে ইমান আমল নষ্ট হয়।মাদক ইসলামে
হারাম পাশাপাশি এটি একটি অপবিত্র বস্তু।
তাই মাদক গ্রহণ করা যেমন হারাম ঠিক তেমনি এ গুলো সংরক্ষণ,ক্রয়- বিক্রয় করাও
হারাম। রাসুল (স.) আরও বলেছেন কোনো ব্যাক্তি মাদক সেবন করলে তার ৪০ দিনের ইবাদত
কবুল হয় না। সে ব্যাক্তি যদি তওবা করে তাহলে আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন কিন্তু সে
আবার এই পাপ কাজে লিপ্ত হয় তাহলে তার ইবাদত ৪০ দিন কবুল হয় না।
লেখকের শেষ মন্তব্য
মাদক আসক্তির কারণে কোন জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে,সেই বিশৃঙ্খলা গোটা সমাজে
ছড়িয়ে পড়ে। তাই আমাদের উচিত সচেতন হওয়া এবং যারা মাদক চক্রের সাথে জড়িত
তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া। এই তরুণ সমাজ দেশের ভবিষ্যৎ,তারা যদি সুস্থতার
মধ্য দিয়ে বড় হয়,তাহলেই তারা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবে। তাই আমাদের
উচিত নিজে সচেতন হওয়া এবং অন্যদের সচেতন করা।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url