হিন্দুদের প্রধান তীর্থস্থান - ভারতীয় তীর্থস্থান সমূহ জেনে নিন

প্রিয় পাঠক সকল আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তুলে ধরবো হিন্দুদের প্রধান তীর্থস্থান এর নাম সমূহ সহ কেনো আমরা তীর্থ স্থানে যাবো কখন যাবো এবং তীর্থস্থান ও তীর্থক্ষেত্রের মধ্যকতটুকু পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে তা সকল বিষয় আলোচনা থাকছে। তাই দেরি না করে জেনে নিন এই মহূর্তে হিন্দুদের প্রধান তীর্থস্থান এর নাম সমূহ।
হিন্দুদের প্রধান তীর্থস্থান
আমাদের জীবনপথে সকল কিছুর প্রয়োজন রয়েছে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে কোনো তীর্থস্থানে যাত্রা সম্পন্ন করা। তীর্থস্থানে যাত্রা সফল করা জীবনেরি একটি অনবদ্য অংশ এতে দেহ মন পরিশুদ্ধ হয়। আমরা পুনরায় ধর্মের প্রতি আরও অগ্রসর হয় মনে মানসিক প্রশান্তি লাভ করে থাকি। তাই আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানবো এই মহূর্তে সবচেয়ে হিন্দুদের প্রধান তীর্থস্থান এর সকল নাম সমূহ সহ আরও অজানা তথ্য নিয়ে। তাই চলুন আমরা দেরি না করে সেসকল তথ্য সমূহ বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।

পোস্টের সূচিপত্রঃহিন্দুদের প্রধান তীর্থস্থান - ভারতীয় তীর্থস্থান সমূহ

তীর্থ অর্থ কি

সনাতন ধর্ম অনুযায়ী তীর্থ মানে কোনো পবিত্র স্থান বা ব্যক্তিকে নির্দেশ করে। আবার তীর্থ মানে হাঁটিয়া পার হওয়া ক্ষেত্র বিশেষে উত্তরণ। তীর্থ কথাটির প্রথম উদ্ভব হয়েছে সংস্কৃত থেকে কোনো কিছু রুপান্তর অর্থে। আবার পূর্ণ্য স্থানকেও তীর্থ স্থান বলা হয়। প্রচীন কালে শ্রাস্ত্রে বর্ণিত রয়েছে যে কোনো পবিত্রকে বুঝানোর অর্থে তীর্থ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল। তীর্থ স্থানকে শ্রাস্ত্র অনুযায়ী তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে প্রথমটি জঙ্গম তীর্থ উদাহরণ সাধু জন, মনিঋুষি, গুরুদেব। দ্বিতীয় স্থাবর তীর্থ স্থান উদাহরণ কৈলাশ, বৃন্দাবন,কেদারনাথ। এবং শেষ নম্বর তৃতীয় তীর্থ হচ্ছে মানস উদাহরণ সত্য, দয়া,ধৈর্য্য, ক্ষমা প্রভৃতি গুনকে মানস তীর্থ বলে।

তীর্থস্থান কাকে বলে

তীর্থস্থান সাধারণ অর্থে বোঝানো হয়েছে কোন পবিত্র জায়গা বিশেষ। ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেও কোনো পবিত্র জায়গাকে কেন্দ্র করে মন্দিরে বা উক্ত স্থানে যাত্রা। আমরা সকলেই ধর্মীয় বিশ্বাস হতে কোনো একটি তীর্থ স্থানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে থাকি এতে আমাদের পরাতন দুচিন্তা, কুকাজকর্ম, পাপ অনেক অংশে ক্ষয় করার জন্য কারণ পবিত্র কোনো স্থানকেই তীর্থ ধাম বা তীর্থ স্থান বলা হয়ে থাকে আর পবিত্র স্থানে গিয়ে আমরা সকলে শান্তি লাভ করে থাকি।
আপনি আপনার জীবন হতে লক্ষ্য করুন আপনি যখনি একটি মন্দিরে গেছেন কিছু সময়ের জন্য হলেও সব কিছু ভুলে আধ্যাতিক এক প্রকার শান্তি লাভ করেছেন এটা আপনার আমার সকলেই আত্মঅভিগতা। আমরা তীর্থ স্থানে যাত্রা করি মানসিক প্রশান্তি লাভের আশা থেকে বা পূর্ণ্য সঞ্চয় করতে এতে করে মানুষ ধর্মের প্রতি আগ্রসর হয় এবং নিজেকে ভালো কাজে আত্ম নিয়োগ করে। পরিশেষে আমরা কোনো পবিত্র জায়গাকে বা সেই স্থানকেই তীর্থ স্থান বলতে পারি সেটা হতে পারে কোনো মন্দির বা ঋষি আবাসভূমি।

তীর্থক্ষেত্র কাকে বলে

তীর্থস্থান বা তীর্থক্ষেত্র কিছুটা একই কথায় বলা চলে দুটোই পবিত্র স্থান কিন্তু এখানে একটু পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে সেটি হলো পৌরাণিক শ্রাস্ত্র অনুযায়ী বা আমাদের ধর্মীয় মতে ঈশ্বর সাকার বা অবতার রূপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিল। অবতীর্ণ হওয়ার পর সেসব স্থানে এখনো স্মৃতি বিদ্যমান রয়েছে সেসব স্থানকে আমরা সহজ কথায় তীর্থক্ষেত্র বলতে পারি। এ বিষয়ে একটি উদাহরণ স্বরূপ তীর্থক্ষেত্রের পরিচয় দিলে বিষয়টি আরও সহজতর হবে যেমন ভগবান রামচন্দ্র সহ মাতা সীতা চন্দ্রনাথ নামক জায়গায় আড়াইদিন অবস্থান করেন এবং 

সেখানে মাতার একবার জল পিপাসা পেয়েছিলো তখন লক্ষ্মণ তীর দ্বারা পাতাল হতে জল বের করে এনেছিলো যা এখন তা বিদ্যমান রয়েছে। পরিবর্তিতে চন্দ্রনাথ নামক পাহাড় এখন বিশাল তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে যা সীতাকুণ্ড পাহাড় নামেও পরিচিত। আশা করি আমরা সকলেই তীর্থ স্থান এবং তীর্থক্ষেত্রে ছোট পার্থক্যটা বুঝতে পেরেছি উভয়ে পবিত্র স্থান দুটো জায়গা থেকেই আমরা পূর্ণ্য সঞ্চয় করতে পারি।

হিন্দুদের প্রধান তীর্থস্থান - ভারতীয় তীর্থস্থান সমূহ

আমরা সনাতনী ধর্মাবলম্বী হওয়ার তরুণ হিন্দুদের প্রধান তীর্থস্থান জানা আমাদের একান্তই আবশ্যক একটি বিষয় কারণ আমাদের জীবনে চলার পথে চতুর্থ আশ্রম অনুযায়ী সন্ন্যাস নামকে আশ্রমের কথা বলা হয়েছে। তখন জীবন কাল ১০০ বছর গড় আয়ু ধরা হতো তাই চতুর্থ আশ্রম ৭৫-১০০ বছর বয়সকে বুঝানো হয়েছে। এই সময় একজন সনাতনী ব্যক্তি গৃহ ত্যাগ করে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধননের জন্য সন্ন্যাস গ্রহণ করে থাকে। তাই এই সময়ে আমাদরে পূর্ণ্য স্থান বা তীর্থস্থান সম্পর্কে জানার প্রয়োজন রয়েছে এছাড়াও প্রয়োজন রয়েছে। যাই হোক আমরা আজ শুধু তীর্থস্থান সম্পর্কে জানবো। 
আমাদের হিন্দুস্থান বলা হয়ে থাকে ভারতকে কারণ হিন্দুদের সবর্ববৃহৎ একটা অংশের বসবাস করে ভারতে এছাড়াও পৌরানিক যুগে অনুযায়ী আমাদের সকল অবতার রুপে আসা দেবগণের অস্তিত্ব দেখা মেলে ভারতবর্ষে তাই হিন্দুদের প্রধান তীর্থস্থান বা ভারতীয় তীর্থেস্থান সমূহ কিছুটা একই কথা। যাইহোক আমরা প্রধান চারটি হিন্দুদের প্রধান তীর্থস্থান বা ভারতীয় তীর্থস্থান সমূহ সম্পর্কে বিবেচিত রয়েছে তা জানবো। 
  • প্রথমে রয়েছে উরিষ্যার পুরি।
  • দ্বিতীয়ত রয়েছে রামেশ্বরম মন্দির।
  • তৃতীয়ত রয়েছে দ্বারকানাথ স্থান বা মন্দির।
  • চর্তুথয়ত রয়েছে ব্র দীননাথ মন্দির।
এছাড়াও পুরানশ্রাস্ত্রমতে তীর্থ স্থানের শীর্ষে রয়েছে
  • হরিদ্বারের ঋশিকেশ মন্দির।
  • মথুরা হতে বৃন্দাবন।
  • দ্বাপরযুগে ঘটিত কুরুক্ষেত্র স্থানটি।
  • রাম মন্দির অযোধ্যা।
আবার বর্তমানে অনেক নতুন তীর্থস্থান হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে সেসব স্থান তা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
  • দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দির।
  • রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের আশ্রম বা মন্দির।
  • স্বামী বিবেকানন্দের আশ্রম বা মন্দির।
  • রামকৃষ্ণ মিশন।
  • স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের আশ্রম।
এছাড়াও ভারতবর্ষে নানা তীর্থস্থান রয়েছে এই আর্টিকেলের কেবল প্রধান প্রধান তীর্থস্থানের নাম সমূহ তুলে ধরা হয়েছে। আবার ভারতবর্ষে তীর্থস্থান ছাড়াও অনেক শক্তিপীঠ বিদ্যমান রয়েছে। আপনার সুবিধামত যোকোন একটি পূর্ণয় স্থানে গিয়ে পূর্ণ লাভ করতে পারেন।

বাংলাদেশের তীর্থস্থান

উপরিউক্ত অনুচ্ছেদের মাধ্যমে আমরা হিন্দুদের প্রধান চারটি তীর্থ স্থান ভারতবর্ষের সম্পর্কে জেনে এখন আমরা জানবো বাংলাদেশের তীর্থস্থান। যেখানে প্রতিবছর হাজার হাজার ভক্তের মনষ-কামনা পূর্ণ্য হচ্ছে। তাই চলুন আমরা বাংলাদেশ বিদ্যমান সেরা তীর্থস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা জানবো। বাংলাদেশ তীর্থস্থান রয়েছে তা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
  • চন্দ্রনাথ বা সীতাকুণ্ড মন্দির।
  • ঢাকেশ্বরী মন্দির।
  • লাঙ্গলবন্দ মন্দির।
  • কুমারীকুন্ড শক্তিপীঠ।
  • সিন্দুরমতি তীর্থস্থান।
  • সুগন্ধাশক্তিপীঠ।
  • ক্ষেত্ররধাম তীর্থস্থান।
এছাড়াও বাংলাদেশে প্রায় ১৪টি সবচেয়ে বড় বা প্রধান মন্দির বিদ্যমান রয়েছে। আমরা যদি বাংলাদেশে বসবাস করি তাহলে উপরিউক্ত তীর্থস্থানে গিয়ে পূর্ণ্য সঞ্চয় করতে পারি। আমরা কোথায় কোথায় যাবো এমনটা প্রধান বিষয় না আমরা পৃথিবীতে অবস্থিত যেকোনো একটি তীর্থধাম দর্শন করলেই হবে কিন্তু যদি আপনার মনে আশা থেকে থাকে আমি অমুক নামক স্থানে যেতে চায় তাহলেও কোনো বাধা নেই যেতেই পারেন। 
আমাদের মোট কথা হচ্ছে যে তীর্থস্থানের উদ্দেশ্য যাত্রা সকল পবিত্র স্থান হতে আমরা পূর্ণ সঞ্চয় করবো এতে কোনো সন্দেহ নেই যদি ঈশ্বর বলেছেন সর্বদা আমাদের নিষ্কাম কর্ম করতে কাং ক্ষতি ফলের আশা ত্যাগ করে শুধু কাজ করতে কেবল মনে তৃপ্তির জন্য কাজ করা সকলে কর্মের সুফল দেবার একমাত্র মালিক আমাদের সৃষ্টিকর্তা।

লেখকের শেষ মন্তব্য

আমরা পৃথিবীর যেই প্রান্তেই অবস্থান করি না কেনো যেকোনো একটি পূর্ণ্যস্থান হতে তীর্থযাত্রা সম্পন্ন করতে পারি উভয় পবিত্র স্থান থেকে সমান পরিমান পূর্ণ্য লাভ করা সম্ভব এতে সন্দেহ নেই। তাই যখন মনে মানসিক প্রশান্তি প্রয়োজন পড়বে সেক্ষেত্রে আপনি আপনার সুবিধা মতো একটি তীর্থধাম ঘুরে আসুন এটি মানসিক প্রশান্তি একটি পার্মানেন্ট সমাধান। আশা করব এই আর্টিকেলের মাধ্যমে উক্ত তথ্য গুলো সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছি যদি ভালো লাগে তাহলে প্রিয়জনদের নিকট তথ্য গুলো পৌঁছে দিন। আবার দেখা হবে নতুন কোনো ধর্মীয় আর্টিকেলে ততক্ষণ পর্যন্ত সুস্থ থাকুক অপরকে এবং অপরকে ভালো রাখুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url