কালী পূজার ইতিহাস - মা কালীর গলায় মুণ্ডমালা কেন

সুপ্রিয় সতীর্থব্লগারবৃন্দ সকলকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ধর্মীয় আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছি আজকের মূল আলোচনায় থাকছে পৌরাণিক কালের আর্বিভাবরত্র মহাকালী বা কালী পূজার ইতিহাস সহ মা কালী নিয়ে নানা অজানা কাহিনি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা জানবো। আপনিও যদি মহাকালী সম্পর্কে অজানা তথ্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হোন তাহলে আজকের আর্টিকেলে চোখ রাখুন।
কালী পূজার ইতিহাস
আমরা সকলে কম বেশি সকলে জামি যে তামসিক ভাবে মহাকালীর উপাসনার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আমরা মহাকালীর কেনো উপাসনা করবো বা করলে আমাদের কী প্রাপ্তি হবে এসব তথ্য যদি না জেনে থাকেনে তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং খুব সহজেই কালী পূজা কেন করা হয়, কালী পূজার ইতিহাস সহ অজানা তথ্য সমূহ জেনে নিন। তাই চলুন আমরা আর কথা আর না বাড়িয়ে মূল আলোচনা বিস্তারিত ভাবে জেনে নিই।

পোস্টের সূচিপত্রঃকালী পূজার ইতিহাস - মা কালীর গলায় মুণ্ডমালা কেন

সূচনাঃকালী পূজার ইতিহাস - মা কালীর গলায় মুণ্ডমালা কেন

মাতা কালীর অর্থ করলে দ্বারাই মহাকাল বা মৃত্যুকে নির্দেশ করে থাকে। তিনি চন্ড নামকে অসুরকে বধ করেন বলে তাঁর আর একটি নাম দেবী চন্ডীকা। তিনি মহাশক্তি অধীকারী যা মাতা দুর্গার আর রুপকে নির্দেশ করে। মহাকালীর গলায় মুন্ডমালা পরিধাণ করে যা ভয়ংকরী রুপকে নির্দেশ করে। তিনি আমাদের মাঝে সমস্ত অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে শুভ শক্তির সূচনা করে থাকেন।

সৃষ্টি ক্ষেত্রেও তিনি যখন অশুভ শক্তির পরিমাণ বেড়ে যায় তখন তিনি সেই ভয়ংকরী রুপে সেই অশুভকে পরাজিত করে শুভ শক্তিকে রক্ষা করে সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষা করেন। মাতা কালীকা মহাদেবের অর্ধাঙ্গানী হিসেবে বিবেচিত রয়েছে তিনি মাতা পার্বতীর আর এক রুপ। এখন আমরা নিম্নবর্গের অনুচ্ছেদ গুলোর মাধ্যমে মাতা কালী সম্পর্কে বা কালী পূজার ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা জানবো তাই সাথেই থাকুন।

কালী পূজার ইতিহাস

মহাকালীর আর নাম যোগঃমায়া সমস্ত শুভ শক্তিকে একত্রে করে মহাকালীর আগমন ঘটানো হয়। আমরা এখনো অনেকের মাঝেই মাতা কালী পূজার ইতিহাস সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারনা নেই বা অবগত না তাই চলুন আজ আমরা এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সেই আজনাকে জেনে নিই। শুরু করছি কালী পূজার ইতিহাস পৌরাণিক কাহিনি হতে। একদা একসময়ে শম্ভ ও নিশম্ভ নামকে রাক্ষসের আগমন হয় তারা কঠোর থেকে কঠোরতম তপস্যা করে নিজেকে অনেক শক্তিশালী করে তুলে এবং

সেই দুই জন রাক্ষস তপসা দ্বারা অমরত্ব লাভ করে কেবল একটি শর্তে তাদের বধ হবেন তারা। এর পরে সেই দুই জনে ক্ষমতা লাভে অহংকারী হয়ে উঠে এবং সেই ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করে একদিন তারা স্বর্গ রাজ্য দখল করতে যায় এবং সমস্ত দেবগণকে পরাজিত করে দেবরাজের স্বর্গ নিয়ে বসে পরক্ষণেই সকল দেবগণকে স্বর্গ হতে বিতাড়িত করতে চাইলে দেবগণ একসময় দিশেহারা হয়ে সাহায্য প্রাপ্তি লক্ষ্যে দেবের দেব মহাদেবর নিকট উপায় জানতে যায় এবং 

সমস্ত কিছু উপস্থাপন করার পরে মহাদেব একটি উপায় তাঁদের দেখান এবং সেই ক্ষনে সমস্ত শুভ শক্তিকে একত্রে করে এক মহামায়ার আর্বিভাব ঘটানো হয় যা ছিলো মহাশক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। যাই হোক মহামায়ার আর্বিভাবের পরে মা কালীরুপে সেই দুই জন রাক্ষস শম্ভু এবং নিশম্ভুকে নিজ হাতে বধ করেন এবং পুররায় দেবরাজকে স্বর্গ রাজ্য ফিরিয়ে দেয় সেই থেকেই মহাশক্তি পুজা বা উপাসনা শুরু হয়েছে যা পৃথিবীতে এখনো বর্তমান রয়েছে। 
এই কালী পূজার ইতিহাস তত্ত্বের জানার জন্য একটি তথ্য জেনে রাখা ভালো যে সেই অসুর দুই জনের বধ করবার শর্ত ছিলো যে কোনো পুরুষ তাদের হত্যা করতে পারবে না এবং তাদের দেহ হতে কোনো রক্ত বিন্দু যদি মাটিতে পরে সেই খান হতেই সেই রক্ত বিন্দু হতে আর একটি অসুরের সৃষ্টি হবে তাই দেবগণ একজন মহামায়ার আর্বিভাব ঘটিয়ে ছিলেন যা ছিলো একজন নারী।

কালী তত্ত্ব

মাতা কালীর আগমন হয়ে ছিলো পৌরাণিক কালেই যা ইতিপূর্বে উপরিউক্ত অনুচ্ছেদের মাধ্যমে মহাকালীর সৃষ্টির কারণ সমূহ জেনেছি এখন আমরা এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে জানবো মহাকাল বা কালী তত্ত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। তাই সময় নষ্ট না করে চলুন আমরা সেই অজানা তথ্য সমূহ জেনে নিই। কালীকে মহাকালের দশমবিদ্যার প্রথম দেবী হিসেবে বিবেচিত রয়েছে। তিনি ত্রিকালদর্শী সমস্ত অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে। 

পৌরাণিক মতে মাতা কালী হলেন মহাদেবের দ্বারা সৃষ্টি বা মহাদেবের শক্তি যা মহাদেবের তৃতীয় নেত্র বা চোখ বলা হয়ে থাকে। মাতা কালী কালীকা নামে আবার মাতা দুর্গার আর এক রুপ এবং মহাদেব অর্ধাঙ্গীনি হিসেবেও পরিচিত। কিছু জায়গায় মাতা কালী চন্ডিকা, ভৌরপি নামেরও পরিচিত। মহাকালী ত্রিকালদর্শীর প্রথম দেবী বলেই তখন থেকেই মহাকালীর তপস্যা, সাধনা এবং আরাধনা শুরু হয়ে সেই শক্তি লাভের লক্ষ্যে নিয়ে। 

তামশিক সাধকরা মহাকালীর আর্শীবাদ লাভের জন্য কঠোর হতে কঠোরতম সাধনা করে চলেছে মহাকালীকে প্রসন্ন করতে পৌরাণিক কালে নানাবিধ উপকরণ উৎসর্গ করতো। সেই পৌরাণিক কাল থেকেই এখন পর্যন্ত সেই সাধনা আরাধনা বর্তমান রয়েছে। এর মাঝে একটি তথ্য জেনে রাখা ভালো যে মাকালীকে প্রসন্ন করতে দিন হিসেবে মঙ্গলবারকে বেঁচে নেওয়া হয়েছে। এর জন্য মহাকালীর পূজো অমাবস্যা তিথীতে সম্পন্ন করা হয় এবং তা অবশ্যই মধ্যরাত্রিতে।

মা কালীর গলায় মুণ্ডমালা কেন

আমরা ইতিপূর্বে মধ্যেই উপরিউক্ত অনুচ্ছেদের আলোচনা হতে জেনেছি যে মা কালী ত্রিকালদর্শী দেবী তিনি আর্বিভাব হবার সময়ে মাতার গলার মালা হিসেবে মুন্ডপাল সমগ্র দিয়ে মালা নির্মিত ছিলো। এবং যহেতু মহাকালীর সৃষ্টির মূল্য উদ্দেশ্য ছিলো সমস্ত অশুভ শক্তিকে পরাজিত করা এর জন্য এক যুদ্ধেরত্র দেখায় এমন মহামায়া সৃষ্টি করা হয়েছিলো এবং 
মাতা কালীকার গলায় মুন্ডমালা সমস্ত অশুভ শক্তির বিনাশকে নির্দেশ করে। যদি কোনো অসুর বা রাক্ষস গণ কোনো ধরনের পুণরায়ঃ সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষার ব্যঘাত ঘটানোর প্রচেষ্টা করতে না চায় এজনও মতা পূর্ব ভংকারী যুদ্ধেরথ যেন তাঁর নির্দিষ্ট রূপ। মাতা কালীর চারটি হাতে চারটি অস্ত্র চার ধরনের শক্তিকে নির্দেশ করে বা প্রতীকী হিসেবে বিবেচিত। মা কালীর বাহন শৃগাল। পৌরাণিক কাহিনিতে মা কালীর সৃষ্টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।

কালী পূজা কেন করা হয়

আমরা উপরিউক্ত অনুচ্ছেদ গুলোর মাধ্যমে ইতিমধ্যে মাতা কালীকার সৃষ্টি কারণ সমূহ জেনেছি এখন আমরা জনবো কালী পূজা কেন করা হয়। মাতা কালী মহাশক্তি এবং ত্রিকালদর্শী যা মহাকাল নামেও পরিচিত। আমাদের মাঝে যেনো কোনো অশুভ শক্তি বিরাজ না করে তথা যদি আসন্নবর্তী কোনো বিপদ হবার সংকেত আমরা লক্ষ্য করি তাহলে সেই বিপদ হতে পরিত্রাণ পাবার লক্ষ্য এবং মৃত্যু ভয় এরাতে মূলত কালীকার পূজো করা হয়।
 
এগুল ছিলো প্রধান কারণ কিন্তু আমরা পৃথিবীতে নানা বিদ কারণে বা নানাবিধ উদেশ্য পূরণের লক্ষ্যে এক একজন মা কালীর পূজো করে থাকে। মাতা কালীর প্রিয় ফুল লাল জবা। সপ্তাহে মঙ্গলবার দিনটি কালী পূজোর জন্য উপযুক্ত হিসেবে ধরা হয়। মাতা কালীর গায়ের বর্ণ শ্যাম বর্ণ বা গৌড় বর্ণের অধিকারী। তিনি আমাদের পৃথিবীতে যখন দুষ্টু শক্তি বৃদ্ধি ঘটতে থাকে তখন মা কালী রুপে সেই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করে থাকেন। ঘোর অমাবস্যা তিথিতে বা কৃষ্ণপক্ষের তিথি মাতা কালীর পূজোর জন্য উত্তম বলে বিবেচিত রয়েছে। 
মূল কথা অশুভ শক্তির হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার লক্ষ্য মাতা কালীর উপাসনা বা পূজো করা হয়ে থাকে তবে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন প্রতাশ্যা নিয়ে মাতার পূজো করে থাকে যেমন তামসিক ব্যক্তিরা সিদ্ধ লাভের জন্য পূজো করে থাকে,মাতা কালীর উপাসকরা পূর্ণ লাভের জন্য বা মাতাকে প্রসন্ন করতে পূজো করে থাকেন অর্থ্যাৎ বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন কারণ হেতু মাতা কালীর পূজো উপাসনা করে থাকে।

উপসংহার

মাতা কালীর উপাসনা করলে মৃত্যু ভয় দূর হয়ে যায় সাথে অশুভ শক্তির হাত থেকে নিজেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিনে মাতা কালীর পূজো উপাসনার যোগ রয়েছে তবে মঙ্গলবারে বিশেষ হিসেবে বিবেচিত রয়েছে। সুতরাং মৃত্যু কাল বা বিপদ থেকে নিজেকে পরিত্রাণ পাবেন কেবল মাতা কালীর উপাসনার মাধ্যমে। পরিশেষে আমাদের আজকের ধর্মীয় আর্টিকেলটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন এবং ভালো লাগলে প্রিয়জনদের নিকট সিয়ার করে তাদের এই আজানা তথ্য গুলো জানার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url