বেদের কয়টি অংশ ও কি কি - বেদ গ্রন্থের রচয়িতা কে
প্রিয় পাঠক সকল নিয়মিত ধর্মীয় তথ্য উপস্থাপনের মতো আজও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
নিয়ে আলোকপাত করবো আজকের টপিক হচ্ছে আমাদের আদি বেদের কয়টি অংশ ও কি
কি এবং সুপ্রাচীন ধর্মগ্রন্থ বেদ নিয়ে। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে খুব
সাবলীল ভাবে বাংলায় বেদ সম্পর্কিত প্রধান প্রধান তথ্য সমূহ গুলো তুলে ধরবো। তাই
আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদের কয়টি অংশ ও কি কি এবং বেদ গ্রন্থের রচয়িতা
কে বেদের সকল আজানা তথ্য জানতে আজকের আর্টিকেল ফলো করুন।
বেদ আমাদের আদি এবং সুপ্রাচীন প্রধান ধর্মগ্রন্থ তাই বেদ সম্পর্কিত সকল
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা আমাদের একান্ত জরুরি একটি বিষয়। আপনি যদি বেদের সকল
তথ্য খোঁজ করছেন তাহলে আজকে পুরো আর্টিকেলটি শুরু হতে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ
সহকারে পড়ুন এবং বেদের কয়টি অংশ ও কি কি সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
জেনে নিন সহজ ভাবে বাংলায়। বেদ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা গুলো আমরা কয়েকটি
অনুচ্ছেদের মাধ্যমে বেদের কয়টি অংশ ও কি কি এবং বেদ গ্রন্থের
রচয়িতা কে জানবো সুতরাং কথা আর না বাড়িয়ে চলুন আমরা নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদের
মাধ্যমে বেদ সম্পর্কিত তথ্য সমূহ জেনে নিই।
পোস্টের সূচিপত্রঃবেদের কয়টি অংশ ও কি কি - বেদ গ্রন্থের রচয়িতা কে
- বেদের কয়টি অংশ ও কি কি
- বেদ গ্রন্থের রচয়িতা কে
- বেদ শব্দের উৎপত্তি
- বেদ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
- উপসংহার
বেদের কয়টি অংশ ও কি কি
প্রিয় পাঠক আজকের এই নতুন অনুচ্ছেদে আপনাকে স্বাগতম আজ আমরা সনাতনধর্মের আদি
এবং প্রধান ধর্ম গ্রন্থ বেদের কয়টি অংশ ও কি কি তা জানবো। সুতরাং আপনিও যদি
সনাতন ধর্মাবলম্বী হয়ে থাকেন তাহলে আজকের অনুচ্ছেদে চোখ রাখুন। যাই এখন আমরা
মূল টপিকের আলোচনা শুরু করি। সনাতন ধর্ম বেদের কয়টি অংশ ও কি কি অনুযায়ী
বেদের চারটি অংশ বিভক্ত করা হয়েছে যথাঃ
- সামবেদ।
- ঋগ্বেদ।
- যজুর্বেদ।
- অথর্ববেদ।
সামবেদঃ সাম শব্দের অর্থ গান। সামবেদ সকল ধরনের ধর্মীয় গান,ছন্দ, গদ্য,
পদ্য,কবিতা,শ্লোক সম্পর্কিত সকল তথ্যের বিবরণ রয়েছে। বেদের এক একটি শ্লোককে
সংহিতা বলা হয়। সামবেদে সাতশত শ্লোক বা সংহিতা রয়েছে এজন্য এর অপর নাম সপ্তশতী
বলা হয়। সামবেদ জানার মাধ্যমে আমরা সকল ধরনের ধর্মীয় ছন্দের ব্যাখা, গান
সম্পর্কিত তথ্য সমূহ সঠিক ভাবে জানতে পারবো। তাই এসব তথ্যে সঠিক জ্ঞান অর্জন
করতে বেদের সামবেদ সংহিতা গ্রন্থ পাঠ করুন। সামবেদের সকল শ্লোক সুর এবং ছন্দে
রচিত রয়েছে।
ঋগ্বেদঃ এই গ্রন্থ সকল ধরনের ধর্মীয় শ্লোক, শ্রুতি নিয়ে বিস্তারিত
আলোচনা রয়েছে। ঋগ্বেদর প্রতিটি শ্লোককে ঋক বলা হয় এ জন্য এই গ্রন্থের নাম করণ
করা হয় ঋগ্বেদ বা বলা হয়। দেবদেবী সহ সকল মন্ত্র, পূজার স্তুতিবাণী এবং শ্লোকের
সঠিক ব্যাখা জানতে ঋগ্বেদ ঋক পাঠ করুন। এই ঋগ্বেদে মোট ঋক বা স্তুতির সংখ্যা
১০,৫৫২ টি। এটি একমাত্র আদি গ্রন্থ প্রথম অংশ ঋগ্বেদ। ঋগ্বেদের চারটি পাঠ রয়েছে
সংহিতা, ব্রাহ্মণ,আরণ্যক এবং উপনিষদ ।
যজুর্বেদঃ এই গ্রন্থে সকল প্রকার যজ্ঞের মন্ত্র, শ্লোক, নিয়মাবলি
সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এটি ঋগ্বেদের অংশ হতে সংকলিত করা হয়েছে।
এই গ্রন্থের মোট শ্লোক সংখ্যা ১,৯৭৫ টি। যজুর্বেদকে প্রধান দুইটি অংশ বিভক্ত
করা হয়েছে একটি হচ্ছে কৃষ্ণযজুর্বেদ অপরটি হচ্ছে শুক্লযজুর্বেদ। এই গ্রন্থ
আমাদের দর্শন এর বিভিন্ন শাখার বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।
অথর্ববেদঃ এই বেদে প্রচীন চিকিৎসা শাস্ত্র কলা সম্পর্কিত সকল প্রকার
বর্ণনা করা হয়েছে। একটি পরিসংখান অনুযায়ী প্রকাশিত তথ্য হচ্ছে ভরতের প্রথম
সার্জারি চিকিৎসার সকল তথ্য সমূহ অথর্ববেদ হতে প্রাপ্ত ছিলো। এই গ্রন্থে ২০ টি
শাখা রয়েছে এবং মোট মন্ত্র রয়েছে ৬,০০০ টি। সকল ধরনের প্রচীন চিকিৎসা বিষয়ক
জ্ঞান লাভ করতে হলে অথর্ব বেদ পাঠ করুন।
বেদ গ্রন্থের রচয়িতা কে
সনাতন ধর্ম যেমন একটি সুপাচীন চিরন্তন একটি ধর্ম যা অতীতে ছিলো বর্তমানে রয়েছে
এবং ভবিষ্যতেও থাকবে তাঁকেই আমরা সনাতন ধর্ম বলি। সনাতন ধর্মের যদি বলা হয়
সবচেয়ে প্রচীন, আদি,এবং প্রধান ধর্মগ্রন্থ কোনটি তাহলে প্রথমেই বেদের নাম উঠে
আসবে কারণ এই ধর্ম গ্রন্থ কেউ রচনা করেননি প্রাচীন ঋষি গণ গভীর সাধনার মাধ্যমে
এই অমূল্য জ্ঞান লাভ করেছেন এজন্য বেদকে অপৌরুষহ বলা হয়।
এটি কোনো ব্যাক্তি বা ঋষিরা রচনা করেননি এটি স্বয়ং ভগবান বা নিরকার ব্রহ্ম
নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছে এবং তা প্রচীনঋষি বর তাঁরা গভীর এবং কঠোর সাধনা
ধ্যানের মাধ্যমে এই জ্ঞান প্রাপ্ত করেছেন। সুতরাং সহজ ভাষায় বলতে গেলে বেদ
গ্রন্থের রচয়িতা কে বললে উত্তর হবে শূন্য কারণ বেদ কোনো ব্যক্তির দ্বারা রচিত
হয়নি এটি অপৌরুষ বেদ নিজেই নিজের সৃষ্টা যা ঋষিরা ধ্যানের মাধ্যমে প্রাপ্ত
করেছেন। আশাকরি উপরিউক্ত আলোচনা সমূহের বিষয় বস্তু ভালো ভাবে জেনেছেন।
বেদ শব্দের উৎপত্তি
প্রিয় পাঠক সকল আমরা ইতিপূর্বে উপরিউক্ত অনুচ্ছেদে বেদের কয়টি অংশ ও কি কি এবং
বেদ গ্রন্থের রচয়িতা কে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ইতিমধ্যে তা শেষ করছি আশা
করবো উপরিউক্ত বিষয় বস্তু সকল ভালো ভাবে জেনেছেন এখন আমরা এই অনুচ্ছেদে মাধ্যমে
আরোও একটি নতুন তথ্য বা নতুন টপিক নিয়ে আলোচনা করবো তাই সাথেই থাকুন। আজকের এই
অনুচ্ছেদে মূল টপিক হচ্ছে বেদ শব্দের উৎপত্তি কিভাবে হলো তা জানবো। সুতরাং
আপনিও যদি এমন তথ্য সঠিক একটি ধারণা লাভ করতে চান বা আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে
আজকের অনুচ্ছেদটি মন দিয়ে শুরু হতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
যাই হোক এখন আমরা বেদ শব্দের উৎপত্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করবো। বেদ সম্পর্কে বলার
আগে একটি তথ্য জেনে নিই বেদ হচ্ছে একটি সংস্কৃত শব্দ যা বিদ্ ধাতু হতে এসেছে।
বেদ বা বিদ্ এর আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে জ্ঞানার্থ, সত্যার্থ,লাভার্থ এবং বিচারর্থ
এই প্রকার জ্ঞানকে নির্দেশ করে থাকে। এবং বিদ্ ধাতু এটি করণ ও অধিকরণ কারকের
সাথে ঘঞ প্রত্যয় যোগে বেদ শব্দটি শুদ্ধ হয়ে থাকে। এবং বেদ শব্দটি দ্বারা মুখ্য
এবং গৌণ বা বড় ও ছোট দুই অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে।
এটি ছিলো কেবল বেদ শব্দের উৎপত্তি নিয়ে আলোচনা কিন্তু বেদের উৎপত্তি বা সৃষ্টির
বিষয় বস্তু ভিন্ন রয়েছে। পূর্বে আমরা জেনেছি যে বেদ কোনো ব্যাক্তি দ্বারা
সৃষ্টি হয়নি বেদ নিজেই নিজের স্রষ্ঠা এজন্য বেদকে অপৌরুষ বলা হয় এই মাহাত্ম্য
বা জ্ঞান ঋষিরা গভীর ধ্যান হতে প্রাপ্ত করেছে। যেখানে জীবনের সকল ধরনের জ্ঞান
রয়েছে তাই এটি সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বলা হয় এবং অনেক অনেক আগে বা
প্রচীন কালে এই জ্ঞানের আর্বিভাব ঘটে বলে এটি আদি গ্রন্থও নামে পরিচিত।
বেদ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
প্রশ্নঃ বেদ প্রধানত কয়টি এবং কি কি?
উত্তরঃ বেদ চারটি ভাগে বিভক্ত যথাঃ ঋগ্বেদ, সামবেদ,যজুর্বেদ এবং অথর্বেদ।
প্রশ্নঃ কোন বেদে কতটি করে শ্লোক রয়েছে?
উত্তরঃ ঋগ্বেদবেদে ১০,৫৫২ টি শ্লোক রয়েছে, সামবেদে ৭০০ টি শ্লোক রয়েছে,
যজুর্বেদে ১,৯৭৫ টি শ্লোক রয়েছে এবং অথর্বেদে ৫,৯৭৭ টি শ্লোক রয়েছে।
প্রশ্নঃ বেদে মোট কতটি শ্লোক রয়েছে?
উত্তরঃ বেদে মোট শ্লোক রয়েছে ১৯,২২৭ টি
প্রশ্নঃ সাম শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ সাম শব্দের অর্থ হলো গান বা সংগীত।
প্রশ্নঃ বেদকে অপৌরুষ বলা হয় কেনো?
উত্তরঃ বেদ কোন পুরুষ বা ব্যাক্তি দ্বারা সৃষ্টি হয়নি বরং বেদ নিজেই নিজের
স্রষ্টা। প্রচীন ঋষিরা গভীর সাধনার মাধ্যমে এই জ্ঞান লাভ করছেন এজন্য বেদকে
অপৌরুষ বলা হয়।
প্রশ্নঃ ঋগ্বেদে কয়টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে?
উত্তরঃ চারটি যথাঃ সংহিতা,ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ।
প্রশ্নঃ বেদ গ্রন্থের রচয়িতা কে?
উত্তরঃ শূন্য। বেদ কেউ রচনা করেননি বরং বেদ নিজেই নিজের স্রষ্টা যা ঋষিগণ
ধ্যানের মাধ্যমে ইহা প্রাপ্ত করেছেন।
প্রশ্নঃ বেদ শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ বেদ শব্দের আক্ষরিক অর্থ বিদ্ শব্দ হতে ঘঞ প্রত্যয় যোগে উৎপত্তি হয়েছে
যা দ্বারা জ্ঞান, সত্য, লাভ এবং বিচার চার জ্ঞানকে নির্দেশ করে এবং এটি
একটি সংস্কৃত শব্দ।
উপসংহার
বেদ হলো সনাতন ধর্মে আদি এবং প্রধান ধর্মগ্রন্থ যেখানে বেদকে আবার সুবিধার্থে
চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে এবং প্রত্যেক গ্রন্থ আলাদা আলাদা বিষয়ের উপর
আলোপাত করা হয়েছে। সুতরাং জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে বেদ নিয়মিত পাঠ করুন
এবং জ্ঞান অর্জন করে তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করুন। পরিশেষে এই ধর্মীয় আর্টিকেলি
আপনার কেমন লেগেছে তা আপনার মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানবেন আর ভালো লাগলে
প্রিয়জনদের নিকট সিয়ার করুন এবং এমন ধর্মীয় আজনা তথ্যের সন্ধান পেতে এই সাইটে
নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url