রাখি বন্ধন উৎসব প্রথম কবে পালিত হয় - রাখি বন্ধন উৎসব কে প্রচলন করেন
আমাদের অনেকের মাঝে হয়তো রাখি বন্ধন উৎসব প্রথম কবে পালিত হয় তা নিয়ে স্পষ্ট ধরনা নেই। তাই আপনে যদি জানতে আগ্রহী হন যে রাখি বন্ধন উৎসব প্রথম কবে পালিত হয় বা কোথায় কে প্রথম সূচনা করে ছিলো তা এসব না জেনে থাকলে আর্টিকেলটি আপনের জন্য সাথেই থাকুন।
আমরা রাখি বন্ধন উৎসব তো সকলে কম বেশি পালন করে আসছি কিন্তু এখনও যদি রাখি বন্ধন উৎসব প্রথম কবে পালিত হয় তা নিয়ে আমাদের মাঝে স্পষ্ট ধারনা না থেকে থাকে। তাহলে আপনে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শুরু হতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন কারণ আজ রাখি বন্ধন উৎসব প্রথম কবে পালিত হয়হ তা নিয়েই থাকছে বিস্তারিত আলোচনা। তাই কথা আর না বাড়িয়ে চলুন ঝটপট মূল আলোচনা রাখি বন্ধন উৎসব প্রথম কবে পালিত হয় তা শুরু করা যাক।
রাখি বন্ধন উৎসব প্রথম কবে পালিত হয়
রাখি বন্ধন উৎসবটি বহু প্রাচীন একটি প্রথা। রাখি বন্ধনের সূত্র পাত্র ঘটে
১৯০৫ সালের দিকে এটি মূলত বঙ্গভঙ্গ কে রোধ করার জন্য আমাদের জাতীয় কবি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই উৎসবের তথা রাখি বন্ধন উৎসবের সূচনা করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতা সহ বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের যথা সিলেট এবং
চট্টগ্রামসহ বিভাগের সকল হাজার হাজার হিন্দু এবং মুসলমানকে ভাই বোন তা একতার
লক্ষ্যে একটি মিত্রতা হবার প্রস্তাবিত করেন এবং সেই সময়েই এই রাখি বন্ধন
উৎসবটি পালন কাজ করেছিলেন।
সেই সময়ে ধর্ম নিয়ে ছিলো নানা রকম অমত বা বিভেদ তাই সকলেকে এক্যবদ্ধতায়
সুতরাং সকলকে সহনীয় পর্যায়ের একত্রিত করার লক্ষ্যে এই রাখি বন্ধন উৎসব প্রথম
শুরু করা হয়। এবং পরে এ পন্থা কার্যকরি ভূমিকা পালনে সমর্থন পায় সেই থেকে আজ
পর্যন্ত সময় ধরে রাখি বন্ধন উৎসবটি পালিত হচ্ছে বা প্রথাটি একনো চলমান রয়েছে।
সেই থেকে শ্রাবণ মাসের প্রথম দিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে অধিক রাখি বন্ধন
উৎসবটি পালন করতে দেখা যায়।
রাখি বন্ধনের মাধ্যমে ভাই বোনের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ আরো গভীর হয়। প্রতিটি
রাখি বন্ধনের মাধ্যমে বোন তার ভাইয়ের হাতে আর রাখি বেঁধে দেয় এবং ভাই
বোনকে অনেক ধরনের উপহার দিয়ে থাকে। ভাইফোঁটা দেওয়ার সময়ে বোন ভাইয়ের
কপালে তিলক দিয়ে বলে "ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা যমের দুয়ারে পরলো কাঁটা
ভাই মোর সোনার বাটা"।
রাখি বন্ধন উৎসব কে প্রচলন করেন
রাখি বন্ধন উৎসবটি বহু সুপ্রাচীন একটি প্রথা এ আমরা সকলে জানি। হিন্দু
ধর্মের শাস্ত্র অনুযায়ী সর্বপ্রথম রাখি বন্ধন উৎসবটি পালন করা হয়েছিল
দ্বাপর যুগে যুগে। দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ংপূর্ণ অবতার রূপে
পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন।
দ্বাপর যুগের মহাভারতের কাহিনী কমবেশি আমরা সকলে জানি সেই সময়ের পাঞ্চাল
নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন দ্রুপদী বা পাঞ্চালি যদিও পাঞ্চালি শ্রীকৃষ্ণের
আত্মীয় স্বরূপ ছিলেন কিন্তু তিনি পাঞ্চালিকে বিশ্বেবাসিকে বোন বলে
স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষান করেন। সেই সময়ের রাখি বন্ধন উৎসবটি প্রথম পালিত
হয়েছিল ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে উপহার স্বরূপ কিন্তু প্রতিশ্রুতি
প্রতিদানের কথা দিলে ছিলেন।
এবং সেই প্রতিদানে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন পঞ্চপান্ডব পাশা খেলায়
পরাজিত হলে দূর্যোধন দ্রৌপদীর সম্মানহানির প্রচেষ্টা করে। তখন ভগবান
শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে রাজ সভা হতে সম্মান রক্ষা করনে। এ হচ্ছে পৌরনাক যুগে
রাখি বন্ধন উৎসবে প্রথম পালিত হবার কাহিনী।
রাখি বন্ধন উৎসব কবে ২০২৩
রাখি একটি পবিত্র বন্ধনের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। প্রতিবছর শ্রাবণ
মাসের প্রথম থেকে পূর্ণিমাটি তিথিতে রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হয়ে থাকে।
হিন্দুধর্ম সম্প্রদায়ের বৃহৎ অংশের লোকজন রাখিবন্ধন উৎসব পালন করে থাকে।
ভাইয়ের সকল বাধা বিপত্তি দূর করতে বোনের ভাইয়ের হাতে রাখি পরিয়ে দেয়
এবং ভাইয়েরাও উপহারের সঙ্গে সারা জীবন বোনদের পাশে থাকার প্রতিশ্রু দিয়ে
থাকে।
এই নতুন বছরে রাখি বন্ধন উৎসবটি পালিত হবে ৩০ আগস্ট ২০২৩ রোজ বুধবার। রাখি
বন্ধনের কিছু সময় শুভ সময় রয়েছে সকাল ৯ টা হতে রাত ৯ টা পর্যন্ত এর
মধ্যে শুভ সময়ের যোগ রয়েছে তবে পূর্ণিমার জোক ৩১ তারিখ সকাল দশটা অব্দি
পর্যন্ত রয়েছে। রাখি বন্ধনে উৎসবটির মাধ্যমে ভাই ও বোনের মধ্যে সম্পর্ক
আরো সুগভীর হয়ে থাকে।
রাখি বন্ধন উৎসব এর নেতৃত্ব দেন কে
রাখি বন্ধন উৎসব ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কে রোধ করতে সর্বপ্রথম রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর রাখি বন্ধনের সূচনা করেছিলেন বা সর্বপ্রথম নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই
সময়ে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলকে এক ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণায় পরস্পর
ভাই বোন হওয়ার জন্য আহবান করেছিলেন। সেই সময় ধর্ম ছিল চরম পর্যায়ে ছিল
মানুষের মধ্যে নানা প্রকার ভেদাভেদ ছিল।
এক কথায় ধর্ম ছিল অসহিষ্ণুতাপূণ্য তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সকলকে ঐক্যবদ্ধ
হওয়ার জন্য রাখি বন্ধন উৎসবকে সূচনা করেছেন এবং সকলে সকল ভেদাভেদ ভুলে
গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতকে সমর্থন জানাই। সেই থেকে আজ পর্যন্ত রাখি
বন্ধন উৎসব পালিত হয়ে চলেছে। প্রতিবছর শ্রাবণ মাসের শুরুতে পূর্ণিমার
তীথিতে রাখি বন্ধন উৎসবটি পালিত হয়।
রাখি বন্ধন উৎসব কী
রাখি বন্ধন উৎসব একটি পবিত্র বা মঙ্গলময় উৎসব হিসেবে ভারতবর্ষে বিবেচিত
হয়ে থাকে। প্রতি মাসে পূর্ণিমার তীথিতে শ্রাবণ মাসে রাখি বন্ধন উৎসবটি
পালন করে থাকে। রাখি বন্ধনের উদ্দেশ্য সকল বোনেরা ভাইদের সকল বাধা বিপদ
থেকে দূর করার উদ্দেশ্যে ভাইদের ডান হাতে রাখি বাধিয়ে দেয় সেই সাথে সকল
ভাইয়েরা বোনদের সুখে-দুখে সবসময় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। রাখি
বন্ধন উৎসবটির মাধ্যমে ভাই এবং বোনের সম্পর্কটা আরো সুগভীর হয়ে থাকে। রাখি
বন্ধন উৎসবটি বহুল প্রাচীন একটি কল্যাণকর প্রথা যা আজ পর্যন্ত পালিত হয়ে
চলেছে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে হিন্দু ধর্মের রাখি বন্ধন উৎসব একটি মঙ্গলময় উৎসব যা
প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার তিথিতে পালিত হয়। রাখি বন্ধন উৎসবটি
সর্বপ্রথম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গভঙ্গ কে রোধ করার লক্ষ্যই রাখি বাঁধার
উৎসবের সূচনা করেন এবং সেই থেকে আজ পর্যন্ত রাখি বন্ধন উৎসবটি পালিত হয়ে
চলেছে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url